আমি, ক্রনেনবার্গ এবং বডি হররের ইতিবৃত্ত
বই লিখতে বসি যখন, প্রথমে ইচ্ছা ছিল মাইন্ডলেস বডি হরর কিছু লেখার। এমন কিছু, যা হবে গোরি, কদর্য এবং ভয়ঙ্কর। আমার বইয়ের প্রথম গল্পটা, এক লোক নিজের লিঙ্গের মুখোশে সত্ত্বা আর অপরাধবোধের সাথে লড়াই করে যে গল্পে, সেই গল্পটা এই জঘন্য কিছু লেখারই প্রয়াস।
ইচ্ছে ছিল এসব কিছু ভূমিকায় লিখতে, লিখেছিলামও। কিন্তু নিজের লেখা নিয়ে নিজে কথা বলাটা বেমানান লাগে আমার কাছে বড্ড। তাই শেষমেশ ফাইনাল ড্রাফটে ভূমিকাটা অন্তর্ভুক্ত করি নি আর। লিঞ্চের কথাই বলি এক্ষেত্রে, As soon as you finish a film (আমার ক্ষেত্রে গল্প) people want you to talk about it. I mean, um, the film is talking.
কিন্তু এক্ষেত্রে কথাটা যায় না। বডি হরর যে বাংলা সাহিত্যে একেবারেই নতুন, এ কথাটি ভুলে গেছিলাম বেমালুম। অনেকেই প্রথম গল্পটা পড়ে ভূয়সী প্রশংসা করেছেন, অনেকেই বাংলা পাঁচের মতো মুখ করে বলেছেন, এইসব কী লিখেছ? তাদের আমি দোষ দিচ্ছি না, ক্রনেনবার্গ প্রথম দেখি যখন, তখন আমার অভিব্যাক্তিও অভিন্ন ছিল না। আমিও বন্ধুকে তৎক্ষণাৎ নক দিয়ে বলেছি, এসব কী আজব জিনিস দেখো তুমি? কিন্তু এখন মনে হচ্ছে বডি হররের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া প্রয়োজনই বটে।
বডি হররের কাজ হচ্ছে কদর্য জিনিসেরই কদর্যতার মাত্রা হিসেবে বোঝাতে রুপকের আশ্রয় নেয়া, এমন কিছুর রূপক, যা কদর্যতর। এবং এক্ষেত্রে মানবশরীরের অঙ্গ প্রতঙ্গর চেয়ে গা ঘিনঘিন করা কদর্য আর কী হতে পারে? ক্রনেনবার্গ তাই করেন, ভিডিওড্রোমে যেমন আশির দশকের মানুষদের প্রযুক্তির প্রতি ভীতিটা তুলে ধরেছেন প্রযুক্তি আর মানবশরীরের রক্তমাখা গা ঘিনঘিন করা নানা দৃশ্য দিয়ে, আবার দ্যা ব্রুডে মাতৃত্বর ভয়াবহতা তুলে ধরেছেন একই কৌশলের আশ্রয় নিয়ে।
আমিও চেষ্টা করছি বডি হররের আমদানি করতে বাংলা সাহিত্যে। যদিও বডি হরর নিয়ে মতভেদ রয়েছে। তাও সিরিয়াস আর মূলধারা, উভয় ধরনের পাঠকদের মাঝে পৌছতে বডি হরর একটা কাজের জিনিস। সিরিয়াস পাঠকরা যেমন কাফকার মেটামোরফোসিস (যদিও তখনও বডি হরর হিসেবে পরিচিত ছিল না, এখনও আছে কি না সন্দেহ। তাও একই ছাঁচে গড়া যেহেতু, আমি বডি হররের কাতারেই ফেলবো) নিয়ে উন্মাদ, মেইনস্ট্রিম দর্শকেরা আবার The Thing গ্রহন করেছেন সাদরে।
পরবর্তীতে এত স্পষ্টভাবে এই কৌশল প্রয়োগ করবো কি না বলতে পারছি না, তবে ইচ্ছে আছে।
যাজ্ঞে, আজকে ক্রনেনবার্গের জন্মদিন - যেই উপলক্ষে বডি হরর নিয়ে এত কথা বলা। শুভ জন্মদিন বীভৎসতার শিল্পী!
Comments
Post a Comment